বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লাস অ্যান্ড সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ চালু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) নয় কর্মকর্তাকে দুই দিন ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুর্নীতি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর)সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার (ইলেকট্রিক) অমিত রায় চৌধুরী, ভারপ্রাপ্ত কম্পট্রোলার নাজিম উদ্দিন আহম্মদ, ডেপুটি কম্পট্রোলার ফয়সাল আরেফিন, ডেপুটি নিরীক্ষা কর্মকর্তা মেসবাউল আরেফিন, জ্যেষ্ঠ সহকারী রেজিস্ট্রার মুক্তার হোসেন, আব্দুর রায়হান ও আতিকুর রহমানকে রাজশাহী দুদক কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদক রাজশাহী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ও তদন্ত কর্মকর্তা আমির হোসাইন।
মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) তিনি সহকারী প্রকৌশলী আহসান হাবীব, সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার (সিভিল) শাহাদাৎ হোসেনকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর রেজিস্ট্রার রুয়েট বরাবর চিঠি দিয়ে এ নয় কর্মকর্তাকে তলব করেছেলেন দুদক আমির হোসাইন। এরইমধ্যে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ড. আব্দুল আলীমের সঙ্গেও কথা বলেছেন অনুসন্ধানকারী এই কর্মকর্তা।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘পাঁচটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন বিভাগ চালুকরণের লক্ষ্যে অবকাঠামোগত ও ল্যাবরেটরি সুবিধা সৃষ্টিকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় রুয়েটে গ্লাস অ্যান্ড সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ চালু প্রকল্পের প্রায় ১৩ কোটি টাকার দুর্নীতি তদন্ত করা হচ্ছে। ২০০৯ সালের ১ জুলাই ২৬ কোটি ১১ লাখ টাকার এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।
ওই প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০১৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। পরে তা বাড়িয়ে ২০১৬ সালের ৩০ জুন করা হয়। প্রকল্প পরিচালক হিসেবে কাজ করেন মোট পাঁচজন। সবশেষ প্রকল্প পরিচালক ছিলেন রুয়েট সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক আবদুল আলীম। আর প্রকল্প চলাকালে তিনি রুয়েট পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরেরও পরিচালক ছিলেন।
নথিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৬ সালের ৩০ জুন মেয়াদ শেষ হলে ৯ আগস্ট আব্দুল আলীম প্রকল্প শেষ হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) প্রতিবেদন পাঠান। এতে তিনি প্রকল্পের বরাদ্দের ২৬ কোটি ১১ লাখ টাকার সবই ব্যয় হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
তবে ২০১৬ সালের ৩০ জুন প্রকল্পের মেয়াদ যেদিন শেষ হয়, সেদিনও প্রকল্পের ব্যাংক হিসাবে ছিল ১৩ কোটি ১৫ লাখ ৭ হাজার ২৭২ টাকা। এরপর ২০১৭ সালের ১ মার্চ ছিল ৭ কোটি ৫৬ লাখ ১০ হাজার ৫৮১ টাকা। ধীরে ধীরে ব্যাংকের টাকা কমতে থাকে। ২০২০ সালের ৩০ জুন ব্যাংকে ছিল মাত্র ৫০ লাখ ৩৬ হাজার ৮৫৯ টাকা। প্রকল্প শেষেও বেঁচে যাওয়া প্রায় ১৩ কোটি টাকা নয়ছয় করার সত্যতা ইউজিসির তদন্তেও উঠে আসে।
এরপর গত ২১ এপ্রিল দুদক প্রধান কার্যালয় বিষয়টি তদন্তের জন্য অনুমোদন দেয়। এ নিয়ে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তাও নিযুক্ত করা হয়। অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা রুয়েটের এ নয় কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কম্পট্রোলার নাজিম উদ্দিন আহম্মদ বলেন, দুদক প্রকল্পের অনিয়মের বিষয়েই ডাকা হয়েছিল। তিনিও গিয়েছিলেন। মূলত দুদক কর্মকর্তারা জানার চেষ্টা করেন, ওই প্রকল্পের সময় তাদের কার কী ভূমিকা ছিল। তিনি সেখানে গিয়ে তার বক্তব্য দিয়েছেন। বলেছেন, কোনো অনিয়মের সঙ্গেই তার কোন ধরনের সম্পৃক্ততা নেই।
অন্যদিকে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) অধ্যাপক আব্দুল আলীম বলেন, যে প্রকল্প নিয়ে অভিযোগ তোলা হয়েছে, সেই প্রকল্পের অবশিষ্ট টাকা এখনো ব্যাংকেই পড়ে আছে। দুদকের ডাক পেয়ে তিনি তার বক্তব্য দিয়ে এসেছেন।