ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিগত কয়েকদিন ধরে আন্দোলন করছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গত ১২ আগষ্ট (সোমবার) ভিসি, প্রো ভিসি, রেজিষ্ট্রার সহ অনেকেই পদত্যাগ করলে প্রসাশনিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়। এতে করে সাধারণ শিক্ষার্থীরাসহ , শিক্ষকদের পরতে হচ্ছে নানা জটিলতায়।
এমন পরিপ্রেক্ষিতে ১৮ আগস্ট রবিবার সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে ২১ দফা দাবি জানিয়েছে।
দাবিতের পূর্বের প্রশাসনে দায়িত্বপ্রাপ্ত কাউকে নতুন প্রশাসনে (ভিসি, প্রো-ভিসি, রেজিস্ট্রার ও ছাত্রকল্যাণ পরিচালক) দায়িত্ব না দিয়ে ভিসি হিসেবে তিন জন শিক্ষকের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে।
এদের মধ্যে রয়েছেন, অধ্যাপক ড. আরেফিন কাওসার, অধ্যাপক ড. আবু তৈয়ব, অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম। প্রো-ভিসি হিসেবে উঠে আসে অধ্যাপক ড. আরেফিন কাওসার, অধ্যাপক ড. আবু তৈয়ব, অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম। রেজিস্ট্রার হিসেবে অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম, অধ্যাপক ড. আবু তৈয়ব, অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলাম। ছাত্রকল্যাণ পরিচালক হিসেবে, অধ্যাপক ড. মনোয়ার হোসেন, অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. উৎপল কুমার।
এছাড়াও ছাত্র সংসদ নির্বাচন এবং মাদক মুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা ও সকল হলের অবৈধ সিট বাতিল করে মেধা/দারিদ্রতার ভিত্তিতে সিট বরাদ্দের দাবি জানানো হয়েছে।
তবে দ্বিতীয় দফায় যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান কে সকল দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন শিক্ষার্থীরা। আর তৃতীয় দফায় বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে সকল প্রকার রাজনৈতিক সংগঠন, পেশাজীবী সংগঠন বা অন্য কোন প্রকার অঙ্গ/ছায়া সংগঠন, লেজুড়বৃত্তিক প্যানেল/পরিষদ/সমিতি, আঞ্চলিক সংগঠন এবং অনিবন্ধিত যেকোন সংগঠনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে। এটি অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
এছাড়া সর্বশেষ সিন্ডিকেটে অনুমোদিত সকল নিয়োগ প্রাপ্তদের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে নিয়োগ বাণিজ্যের সাথে জড়িত সকলকে শাস্তির আওতায় আনা এবং অবৈধ ও দলীয় ভাবে নিয়োগ প্রাপ্তদের চাকুরিচ্যুত করার আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছে।
অপরদিকে সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বাধাদানকারীদের শাস্তির আওতায় এনে বহিষ্কার (নূন্যতম ১ বছর) এবং বিগত দিনে যারা শিক্ষার্থীদের গেস্টরুমে নিয়ে অথবা বিভিন্নভাবে শারীরিক নির্যাতন করেছে অবিলম্বে তাদের হলের সিট বাতিল করে শাস্তির আওতায় আনার (নূন্যতম ২ বছরের জন্য বহিষ্কার) প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে যেসকল শিক্ষার্থী ইতোমধ্যেই গ্রাজুয়েশন শেষ করেছেন বা মাস্টার্স প্রোগ্রামে ভর্তি আছেন তাদের ছাত্রত্ব ও সার্টিফিকেট বাতিলের জোরালো দাবি তুলেছে শিক্ষার্থীরা।
একইভাবে ডিএসডব্লিউ অফিস শতভাগ ডুয়েটিয়ান শিক্ষকদের মাধ্যমে পূনর্বিন্যাস; নিয়োগের ক্ষেত্রে যে সকল শিক্ষার্থী বৈষম্যের স্বীকার হয়েছে, তাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে নিয়োগ প্রদান এবং বৈষম্যের স্বীকার হওয়া শিক্ষকদের দ্রুত ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা এবং শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ডুয়েটিয়ান নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে ও শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মাস্টার্স বাধ্যতামূলক না করার দাবি করা হয়েছে।
বাকি দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে-
১১. বর্ধিত দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কার্যক্রম দ্রুত চালু করা ও শিক্ষার্থীদের মতের ভিত্তিতে হলের নাম নির্ধারন করতে হবে এবং দ্বিতীয় ক্যম্পাসে মসজিদের ব্যবস্থা করত হবে।
১২. শিক্ষার্থী কর্তৃক টিচার ইভালুয়েশনের মাধ্যমে শিক্ষার মান নিশ্চিত করা ও হল প্রভোস্টের দায়িত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী বান্ধব শিক্ষক বাছাই করতে হবে।
১৩. মাষ্টার্সের ক্ষেত্রে TA/RA ফেলোশিপ সর্বনিম্ন ২০০০০ টাকা করা।
১৪. লাইব্রেরি, পরিবহন সুবিধা ও মেডিকেল সেবার মান উন্নীত করতে হবে।
১৫. বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাব সমূহকে রুম ও বার্ষিক পরিচালনা বাজেট বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে।
১৬. বিগত দিনের উন্নয়ন প্রকল্প সমূহের দূর্নীতি তদন্ত করা ও প্রমাণসাপেক্ষে অভিযুক্তদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান করতে হবে।
১৭. ছাত্র প্রতিনিধিদের (ছাত্র সংসদ ও CR Forum) সমন্বয়ে একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন করতে হবে।
১৮. বার্ষিক বাজেটে গবেষনামুখী কাজের জন্য উল্লেখযোগ্য বাজেট নির্ধারন করতে হবে।
১৯. ক্লিয়ারেন্স এর নামে হেনস্তা বন্ধ করতে হবে। এক্ষেত্রে ক্লিয়ারেন্স প্রত্রিয়া ডিজিটালি সম্পন্ন করতে হবে।
২০. পরীক্ষার খাতায় এনকোডিং এর ব্যবস্থা করত হবে।
২১. বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যলামনাই গঠনে শিক্ষকদের ভূমিকা রাখতে হবে।
প্রসঙ্গত, ডুয়েট অডিটোরিয়ামে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে এসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডুয়েট সাধারণ শিক্ষার্থীরা।