প্লাস্টিক বর্জ্যের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং বর্জ্যমুক্ত ও টেকসই বাংলাদেশ গড়ে তুলতে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভাবন ও গবেষণায় অংশীদারিত্বমূলক উদ্যোগে যুক্ত হয়েছে ইউনিলিভার বাংলাদেশ। লক্ষ্য পূরণে প্যাকেজিংয়ে প্লাস্টিক দূষণ কমাতে সোমবার ইউবিএল এবং বুয়েটের রাইজ ল্যাবের সঙ্গে অংশীদারিত্বমূলক সমঝোতা চুক্তি হয়েছে।
বুয়েট ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. সত্য প্রসাদ মজুমদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বুয়েটের রিসার্চ এন্ড ইনোভেশন সেন্টার ফর সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং পরিচালক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ আনিসুজ্জামান তালুকদার এবং ইউবিএল সিইও ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর জাভেদ আখতার নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে সই করেন।
চুক্তি অনুযায়ী, ভবিষ্যৎ পরিবেশ-বান্ধব প্রযুক্তিগত সমাধান হিসেবে, কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমাতে, বিদ্যুৎ ব্যবহারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি এবং পণ্যের কাঁচামালের জন্য টেকসই উৎপাদন খাত নিশ্চিতসহ রি-সাইকেলেবল, রি-ইউজেবল ও পচনশীল প্যাকেজিং পদ্ধতি উদ্ভাবনে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যাবস্থাপনাকে ব্যবসায়িক মডেলে নিয়ে এসে সমাধানের উপায় বের করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী।
চুক্তি সই অনুষ্ঠানে ‘গেস্ট অব অনার’ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বুয়েট এর প্রো-ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. আব্দুল জব্বার খান। গবেষণা ও উন্নয়নে সহযোগিতা ছাড়াও অংশীদারিত্ব চুক্তির ফলে সক্ষমতা বৃদ্ধি, নীতিমালা সংক্রান্ত প্রসার এবং শিক্ষা ও সচেতনতা বিষয়ে সমন্বয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের আরো টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
ইউনিলিভার বাংলাদেশ এর সিইও ও এমডি জাভেদ আখতার বলেন, “ইউনিলিভার এর ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে মূলত টেকসই উন্নয়নকে ঘিরে। পৃথিবীর স্বাস্থ্যের উন্নয়নে আমাদের বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে ২০২০ সাল থেকে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আমরা অভিনব বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়িত করে আসছি, যেগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে- অভিনব প্যাকেজিং, প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনায় একটি টেকসই মডেল তৈরি এবং বহুমুখী- অংশীজন (মাল্টি স্টেকহোল্ডার) আলোচনা ও অভিজ্ঞতা আদান-প্রদানের লক্ষ্যে সকলের জন্য প্ল্যাটফর্ম গঠন। আমরা এখন প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনায় একটি টেকসই ইকোসিস্টেম গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন উপায় খুঁজে চলেছি, তাই এই খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন এমন গবেষক ও বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কাজ করার এটাই সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। ইন্ডাস্ট্রির বর্তমান চ্যালেঞ্জ উপলব্ধির পাশাপাশি টেকসই প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় যৌথ লক্ষ্যপূরণে আমাদের নিজেদের পরিচালিত করতে উদ্ভাবন ও গবেষণায় শীর্ষস্থানীয় এবং দেশের সবচেয়ে স্বনামধন্য প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েট এর সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে আমরা আনন্দিত। আমাদের যৌথ প্রচেষ্টায়, আমরা অর্থনীতিতে দীর্ঘস্থায়ী ইতিবাচক প্রভাব রাখতে সক্ষম, এছাড়া অর্জন করতে পারি ভিশন-২০৪১ এবং বাংলাদেশকে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সামনে মডেল হিসেবে তুলে ধরতে পারি। আমি বুয়েট এর প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. আব্দুল জব্বার খান, প্রতিষ্ঠানটির ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার, বুয়েট ‘রাইজ’ এর ডিরেক্টর প্রফেসর ড. আনিসুজ্জামান তালুকদার এবং তার টিমকে তাদের সহযোগিতার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”
বুয়েট এর ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ডক্টর সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেন, “ইউবিএল এবং বুয়েট প্রায় একইসময়ে বাংলাদেশে তাদের যাত্রা শুরু করে এবং দেশের উন্নয়নে স্ব স্ব খাতে উভয়ের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। ইন্ডাস্ট্রি এবং একাডেমিয়া একটি টেকসই ভবিষ্যৎ নির্মাণে একে অপরের সহযোগী হিসেবে কাজ করে। তবে সেইসঙ্গে সরকারের উৎসাহ ও সহযোগিতাও গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণা নির্ভর অংশীদারিত্ব তৈরির সুযোগ করে দেওয়ায় আমি বাংলাদেশ সরকারের ‘স্মার্ট বাংলাদেশ ভিশন ২০৪১’ ভিশনের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমি বিশ্বাস করি ইন্ডাস্ট্রি লিডার ও একাডেমিক ইন্সটিটিউশন এর শক্তিশালী অংশীদারিত্ব অধিকতর উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে সরকারি উদ্যোগে অবদান রাখতে পারে।”
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, “বর্তমান বিশ্বের প্রধানতম ৩টি সংকট হচ্ছে- জলবায়ু পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্যের উপর হুমকি ও প্লাস্টিক দূষণ; এই সংকটগুলো মোকাবেলায় নীতি ও কৌশলগুলোর ওপর বাংলাদেশেরও ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ আমাদের পরিবেশে দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। আমি মনে করি প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যাবস্থাপনাকে ব্যবসায়িক মডেলে নিয়ে এসে সমাধানের উপায় বের করা প্রয়োজন। এই সমঝোতা স্মারকের ফলশ্রুতিতে একটি বৈশ্বিক ব্র্যান্ড হিসেবে ইউনিলিভার তার অভিজ্ঞতা বুয়েট এর সঙ্গে বিনিময় করবে এবং প্লাস্টিক সমস্যা সমাধানে অভিনব উপায়গুলো সামনে নিয়ে আসবে বলে আমি আশাবাদী।”